মোর্শেদা চৌধুরী এ্যানি এর ৫টি কবিতা
ছেঁড়া টাকার নোট
দেখে শুনে লইতে হবে ছেঁড়া-পোড়া টাকা
নইলে যে খাইতে হবে মজার মজার ধোঁকা।
অন্য মনস্কে টাকা লেনদেনে দেখবেন খেলা
সুযোগ বুঝে খেতে হবে আমার মতো ঠেলা।
গাড়ির ড্রাইভার হোক বা দোকানদার হোক
চালাকিতে চালিয়ে দিবে ছেঁড়া টাকার নোট।
আপনিও হঠাৎ ধরা খাবেন এমন চালাকিতে
দিনে আন্ধা রাইতে বান্ধা কারো ছলচাতুরীতে।
একদিন কিন্তু ধরা খাবেন দিয়ে সেদিন ফাঁকি
হতে পারে কখনো কাউকে দিয়েছিলেন ঝাঁকি।
যাদুমাখা ভেলকিভাজিতে করেছিলেন যে ছল
আপনাআপনি ধরা খাবেন হাসির কলোরোল।
এমন টাকা যদি নাহি চলে তবে ব্যাংকে চলে যান
লুকোচুরিতে কেনো ঘটান শুনি অন্যের মুখে ম্লান?
ঈদের বাজার খুব হুশিয়ার টাকা আদান প্রদানে
ছেঁড়া-পোড়া টাকা ঢুঁকিয়ে দিবে ভাওতাবাজিতে।
০৮-০৪-২০২৪ইং, বরুড়া, কুমিল্লা।
++++++++++++++++++++++++++++++
মিনতি তোমার কাছে
হে রাসুল তুমি না হয় আমার হয়ে
সুপারিশ করো ঐ রোজ হাশরে
আমি ভীষণ পাপী ক্ষমা যেনো পাই
মহান রাব্বুলের পবিত্র দরবারে।
এই পৃথিবীতে পাপের প্রায়শ্চিত্তে
ভুগছি কতইনা কঠিন বেদনায়
না জানি কত কষ্ট ভোগ করতে হবে
শেষ বিচারের শ্বাসরুদ্ধকর যন্ত্রণায়!
ভুলের কাঁটায় ভরা পথেরও সন্ধান
জ্বালার মালায় গাঁথা জল ও স্থল
বিষাক্ত ফুলে ফুলে সোনারও পালঙ্ক
মেঘে মেঘে অন্ধকার মানুষের ছল!
পিচ্ছিল পথের মাঝে দমকা হাওয়া
দিকবিদিক শুন্য হয়ে ঝাপসা চোখে
শত ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর করুন ষড়যন্ত্রে
নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা হাসিমুখে।
০৮-০৪-২০২৪ইং, বরুড়া, কুমিল্লা।
+++++++++++++++++++++
আত্মশুদ্ধিতে প্রাণ
ত্রিশ রোজার ত্রিশ ফরজ
ত্রিশ দিনের ত্রিশ ফজিলত।
ত্রিশ তারাবীর ত্রিশ মোনাজাত
শবে কদরের মহিমান্বিত রাত।
কোরআন নাজিল হয় এই মাসে
বৃদ্ধি হলো তাই মুসলনানের সম্মান।
রোজা-নামাজ হজ্ব-যাকাত
আত্মশুদ্ধির পরম সত্যতার।
কত মানুষ অপচয় করে করে
দিন অতিবাহিত করে থাকে।
কত মানুষ অন্যের ক্ষতি করে
শান্তি খুঁজে তারা আপন মনে।
কত মানুষ অধিক মূল্যে পুণ্য
ক্রয় বিক্রয় করে লাভমান হয়।
কত মানুষ তিলকে তাল করে
ঘটনা রটিয়ে বেড়ায় পথে ঘাটে।
কত মানুষ চুগলখোরিতে আগুন
লাগায় দু’ব্যক্তির সুন্দর সংসারে।
কেউবা আবার ধন দৌলতে ভরা
দান করেন দু’হাতে প্রাণ খুলে।
কেউবা আবার মুক্ত মননশীলতায়
অসহায় ও দরিদ্রকে চেপে ধরে।
মহান এই পবিত্র রমজান মাসে
চলুন সবাই আত্মশুদ্ধি করি।
০৫-০৪-২০২৪ইং, বরুড়া, কুমিল্লা।
+++++++++++++++++++++
রমজানেরই বিদায় ক্ষণে
পবিত্র এই মহান রমজানের বিদায়ী ক্ষণে ক্ষণে
চোখের কোণে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু কণার জল
রহমত বরকত নাজাতের এই পবিত্র রমজানে
অজানা দেশে চলে গেছে কারো আত্মীয় স্বজন!
কেউবা আবার হঠাৎ করে সড়ক দূর্ঘটনার কবলে
শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ হাঁরিয়ে জীবিত থেকেও মৃত
কারো আবার প্রাণের মানুষটি ভুগছে ভীষণ অসুখে
অবহেলা আর নির্যাতনে ভুগছে অবলা নারীরা শত!
কেউ কেউ আবার অন্তরের ক্ষতে জ্বলে পুড়ে মরছে
আপন পর সবাই তিতা অসহায়ের করুণ দৃশ্য দেখে
ঘৃণার দৃষ্টিতে আঘাতে আঘাতে তুচ্ছতাচ্ছিল্যে মারছে
দূর্ভাগ্যবশত: কেউবা বন্ধী হয়েছে নিকষ কারাগারে!
ঈদের চাঁদের হাসি দেখে সবার মনে ফুটছে আনন্দ
মনের মানুষ প্রবাসে থাকলে কি ভালো লাগে ঈদ?
রাতের বেলা তারাবীর নামাজটিও চলে গেলো ঠিক
ভোর বেলাতে সেহরির শেষ মুহূর্তে গেল চোখের নিদ!
আর জীবনে আসবে কিনা পবিত্র এই মহান রমজান
ক্ষমা করে দিও ওগো প্রভু করেছি আমি যত পাপ
পরপারে হঠাৎ যাই যদি চলে আগামী রোজার আগে
ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিও প্রভু করিও আমায় মাফ!
০৯-০৪-২৪ইং, বরুড়া, কুমিল্লা।
++++++++++++++++++++++++++++++
ঈদের খুশিতে কাঁদি
ঈদ এসেছে ঈদ এসেছে মাগো শুনছো
জলদি জলদি নতুন জামা-জুতা দাও
গেলো বছর ঈদেও মা শান্ত্বনা দিয়েছো
এবারও জামা-জুতা কিনতে দেখিনা তাও।
মিথ্যে কথার চিড়ে ভিজিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে
আর কত অভিনয় করে জনম কাঁটাবে?
চুপিচুপি কাঁদতেও দেখছি তোমায় মা
সত্যিটা কি আমাদের মন খুলে বলবে?
নিজে না খেয়ে কেনো মোদের খাওয়ালে
তুমি নিজে না পড়ে কেনো মোদের পড়াতে?
বাবাও তো মা আয় রোজকার করেন
তবে কেনো তুমি অভাব অনটনে কাঁটাতে?
তবে শোন-
আমি তোদের গর্ভধারিনী মা হতে পারি
তবে তোদের বাবার মনের মতো নই
কাজের মেয়েরাও সমাজে মান-মর্যাদা পায়
তোদের বাবার চোখে আমার মর্যাদা নেই।
বিয়ের সময় ইচ্ছা ও আকাঙ্খা ছিল-
তাঁর মোটা অংকের যৌতুক পাবার
অনেক পিড়াপিড়ি চেষ্টা করেও ব্যর্থ
তখন ইচ্ছা-আকাঙ্খা পূর্ণ হয়নি তাঁর।
সেদিন থেকেই আমি তাঁর চক্ষুশুল
অবহেলা আর নির্যাতনের সাথে সাথে
দীর্ঘ ত্রিশটা বছর কাঁটিয়ে দিলাম তাই
বেলাশেষে মরছি আমি ধোঁকে ধোঁকে!
ঈদের দিন আসলেই যন্ত্রণায় ছটফট করি
তোদের নানা-নানির কথা স্মরণ করে
নিজে না খেয়েও খাবার বিলিয়ে দিতেন
কত অসহায় আর অনাহারীর মুখে মুখে।
ঈদের দিন নতুন জুতা নতুন পোশাক
খুঁজতে হতো না নানা-নানির কাছে
ঈদের দিনে নতুন জুতা জামার সাথে
বকশিসও থাকতো আনন্দের সাথে।
কিন্তু আমি তোদের এতই হতভাগী মা
দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জুটাতেই দায়
প্রতিহিংস-ঘৃণার অনলে জ্বলতে জ্বলতে
দিন শেষে নুন আনতে পানতা ফুড়ায়!
মাগো তুমি লক্ষ্মীসোনা চাঁদেরকণা
অভিমান করোনা আর আমাদের প্রতি
নতুন জুতা ও পোশাক লাগবেনা মাগো
মায়া মমতার পরশে জড়িয়ে রাখো যদি।
১১-০৪-২০২৪ইং, বরুড়া, কুমিল্লা।